জীববিদ্যা ( 12th Class )
শৈবালের ( Algae ) সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ?
শৈবাল ( Algae ) : ক্লোরোফিলযুক্ত, আদি নিউক্লিয়াস বা আদর্শ নিউক্লিয়াসযুক্ত, স্বভোজী পুষ্টিসম্পন্নকারী, সমাঙ্গদেহী সরল প্রকৃতির উদ্ভিদদের শৈবাল বলে।
শৈবালের ( Algae ) সাধারণ বৈশিষ্ট্য –
- উদ্ভিদজগতে স্থান : শৈবাল থ্যালোফাইটা বা সমাঙ্গদেহী বিভাগের অন্তর্গত ক্লোরোফিলযুক্ত স্বভোজী উদ্ভিদ।
- বাসস্থান : শৈবাল মুখ্যত জলজ উদ্ভিদ। তবে এদের অর্ধজলজ ও স্থলজ হিসেবেও জন্মাতে দেখা যায়। শৈবাল অনেকসময় মিথোজীবীরূপে ছত্রাকের সঙ্গে সহাবস্থান করে। যেমন-লাইকেন (Lichen) |
- দেহগঠন : শৈবাল এককোশী (ক্ল্যামাই- ডোমোনাস), বহুকোশী, শাখাহীন বা শাখান্বিত সূত্রাকার (স্পাইরোগাইরা) হয়। কোনো কোনো শৈবাল ফাঁপা নলের মতো বা উপনিবেশ গঠনকারী (ভলভক্স) হয়। একসারি শৈবাল কোশকে ট্রাইকোম বা রুহ (trichome) বলে। ট্রাইকোম যখন পিচ্ছিল পদার্থের আবরণে আবৃত থাকে, তখন তাকে অণুসূত্র বা ফিলামেন্ট (filament) বলে। এককোশী না শৈবালরা অনেকক্ষেত্রে ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট হয়।
- কোশের প্রকৃতি : শৈবালের কোশ প্রো-ক্যারিওটিক (নীলাভ-সবুজ শৈবাল) বা ইউ- ক্যারিওটিক প্রকৃতির হয়। কোশে কোশপ্রাচীর থাকে। কোশের সাইটোপ্লাজমে আদর্শ নিউক্লিয়াসসহ বিভিন্নরকম কোশ-অঙ্গাণু থাকে।
- কোশপ্রাচীর : শৈবালের কোশ সাধারণত দু-স্তরবিশিষ্ট কোশপ্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত থাকে। কয়েকটি ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শৈবালের কোশে কোশপ্রাচীর থাকে না। এদের কোশে পেরিপ্লাস্ট (Periplast) নামক দৃঢ় আবরণ থাকে। শৈবালের কোশপ্রাচীরে সেলুলোজ, পেকটিন ও মিউসিলেজ জাতীয় কার্বোহাইড্রেট থাকে। কোশপ্রাচীরে অনেকসময় প্রোটিন জমা থাকে।
- রঞ্জক কণা : শৈবালের কোশে অবস্থিত প্রধান রঞ্জক কণা হল সবুজ বর্ণের ক্লোরোফিল। ক্লোরোফিল ছাড়াও বাদামি, নীল, লাল, বাদামি-হলুদ প্রভৃতি রঞ্জক কণাও থাকে। রঞ্জক প্লাস্টিডের মধ্যে অবস্থান করে। তবে প্রোক্যারিওটিক শৈবালদের ক্ষেত্রে রঞ্জক সাইটোপ্লাজমে থাকে। শৈবাল কোশে প্লাস্টিডের মধ্যে পাইরিনয়েড (pyrenoid) দানা থাকে যা প্রকৃতপক্ষে শ্বেতসার পরিবৃত প্রোটিন দানাবিশেষ।
- ক্লোরোপ্লাস্টিড : শৈবালের কোশের ক্লোরোপ্লাস্টিড গোলাকার, ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার, তারকাকার, জালকাকার, ফিতাকৃতি ও চাকতির মতো হয়।
- সঞ্চিত খাদ্যবস্তু : শৈবালের কোশে সঞ্চিত প্রধান খাদ্যবস্তু হল কার্বোহাইড্রেট। এ ছাড়া স্নেহপদার্থ, লিউকোসিন, প্যারামাইলাম ইত্যাদি পদার্থ সম্মিত খাদ্যরূপে অবস্থান করে। শৈবালে কার্বোহাইড্রেট বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন-সবুজ শৈবালে শ্বেতসার, বাদামি শৈবালে ম্যানিটল ও ল্যামিনারিন, সোনালি-বাদামি শৈবালে ডায়াটমিন, নীলাভ-সবুজ শৈবালে সায়ানোফাইসিয়ান শ্বেতসার ইত্যাদি।
- জনন : শৈবালের জনন অঙ্গজ, অযৌন ও যৌন জনন পদ্ধতিতে হয়। এদের অঙ্গজ জনন খন্ডীভবন পদ্ধতিতে ঘটে। এদের অযৌন জনন রেণুর সাহায্যে ঘটে। এদের যৌন জনন তিন রকমের, যেমন-অ্যানাইসোগ্যামি (Anisogamy), আইসোগ্যামি (Isogamy) ও উগ্যামি (Oogamy) প্রকৃতির হয়। এদের সংযুক্তি (conjugation) পদ্ধতিতেও যৌন জনন সম্পন্ন হয়।
- জনুক্রম : উন্নত প্রকারের শৈবালে সুস্পষ্ট জনুক্রম দেখা যায়। এদের জনুক্রমে হ্যাপ্লয়েড লিঙ্গধর জনু (n) এবং ডিপ্লয়েড রেণুধর জনু (2n) পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হয়।
====>>> ভারতের নানা প্রান্তে জলবায়ুর বিভিন্নতার জন্য কী কী কারণ